জুলাই ৩, ২০২১
শ্যামনগরে পরীক্ষায় অনীহা আর অসচেতনতায় বাড়ছে করোনা সংক্রমণ
গাজী ইমরান, শ্যামনগর: জেলা উপজেলায় কমছে না করোনায় আক্রন্ত মানুষের সংখ্যা। সব চেয়ে খারাপ অবস্থা গ্রামাঞ্চলে। অসচেতনতায় সংক্রামিত ব্যক্তি মারত্মক পর্যায়ে যাওয়ার পরই শ^াস কস্ট নিয়ে ভর্তি হচ্ছেন হাসপতালে। এ সময়ের মধ্যে সংক্রমিত হচ্ছে আরো অনেকে। এ কারণেই করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রত্যাশিত মাত্রায় যেমন ঠেকানো যাচ্ছে না, তেমনি মৃত্যুও ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ছে দিনে দিনে। আগের তুলনায় আক্রান্তদের মধ্যে জটিলতা বাড়ছে, হাসপাতালে ভর্তির হার বাড়ছে আর মৃত্যু ও বাড়ছে। ফলে এখন মৃত্যুর ঊর্ধ্বগতি ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে সংক্রমণ রোধে চূড়ান্ত কৌশল হিসেবেই আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় কঠোর লকডাউন কার্যকর করছে প্রশাসন। তবে যে হারে রোগী বাড়ছে সেটা থামাতে হলে করেনা পরীক্ষার হার বাড়তে হবে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা। গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সাথে আলাপ কালে জানা গেছে, মানুষের মধ্যেও সচেতনতার তীব্র ঘাটতি রয়েছে। করোনা ভাইরাস নিয়ে অনেকেই মনে করছেন এটা বড় লোকের রোগ। কেউ বলছেন এটা শহরের মনুষের হবে। ঘরে ঘরে জ¦র সর্দি কাশি নিয়ে ভুগছে মানুষ। তার পরও করোনা টেস্ট নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নেই। এনিয়ে সচেতন নাগরিকরা জানান, এক ধরনের সামাজিক বাধার কারণেও অনেকে করোনা টেস্ট করতে চাচ্ছে না। অন্যদিকে এলাকার স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের দাবি সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে করোনা টেস্টের জন্য ব্যাপক প্রচার প্রচারণাও চালাতে হবে। করোনার উপসর্গ দেখা মাত্রই মানুষ যাতে টেস্ট করাতে পারে সে জন্য এলাকারা জনপ্রতিনিধিরাও গ্রাম পুলিশ বা ইউপি মেম্বারদের মাধ্যমে প্রচার করলে টেস্টের হারও বৃদ্ধি পাবে। বেশি মানুষকে করোনা পরীক্ষার আওতায় আনা গেলে সংক্রমিত ব্যক্তিদের আলাদা করা যাবে। এতে করে ভাইরাসটি বেশি মানুষের মধ্যে ছড়াতে পারবে না। করোনা পরীক্ষায় ধীর গতি নিয়ে কথা হয় শ্যামনগরের গ্রাম্য ডাক্তার ফারুক হোসেনের সাথে। তিনি জানান, এলাকার অনেকেই করোনা টেস্ট করাতে চাচ্ছে না। পজেটিভ হলে হোম কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে। সামাজিকভাবে মানুষের কাছে হেয় হতে হবে। এলাকার অনেকেই করোনার লক্ষন থাকলেও পরীক্ষা না করিয়ে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরীক্ষায় করোনা পজেটিভ নিয়েও অনেকে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অনেক পরিবারে পরিবারের এক সদস্য আক্রান্ত হলেও অন্যরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসবকিছু সচেতনতার অভাব বলে তিনি মনে করেন। স্থানীয় গ্রাম্য ডা.আকবর হোসেন বলেন, পরীক্ষাতেই আতংক। তাদের ধারণা রিপোর্ট পজেটিভ হলে ডাক্তাররা হাসপাতালে রেখে দেবে। তিনি আরো বলেন,আমার চেম্বারে যারা আসছেন তাদের ১০০ ভাগের ৮০ ভাগ সাধারণ জ্বর নিয়ে আসছেন তবুও তাদের টেস্ট করানোর পরামর্শ দিচ্ছি। যাদের শ্বাসকষ্ট নেই,তেমন কোনো সমস্যা নেই তাদের বাড়ি রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছি। অনেকের লক্ষণ প্রকাশ না পেলেও তারা আক্রান্ত হয়েছে। প্রাথমিক স্টেজে লক্ষন দেখা গেলে পরীক্ষা করে চিকিৎসা নিলে অল্প খরচেই ভলো হয়ে যাবে রোগী। দেরি করলে জটিলতা বাড়ছে। শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অজয় সাহা বলেন, শ্যামনগরে পরীক্ষার পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়েছে। কালিগঞ্জে পরীক্ষা না হওয়ায় সেখানকার লোকজন শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসার কারণে এখানে করোনা টেস্ট বেড়েছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরো জানান, এলাকার মানুষ অনেকেই সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে এবং করোনা পজেটিভ হলে মানুষ তাদের দূরে দূরে রাখবে এজন্য পরীক্ষা করাতে আসছে না। তবে পরীক্ষা করলে আক্রান্তের পরিমাণ কমে আসতো। যাদের পজেটিভ আসছে তাদের কোয়ারান্টাইনে রাখতে পারলে সংক্রমণ কমে আসতো। তিনি বলেন প্রথমে ধরা পড়লে ক্ষতি হওয়ায় সম্ভাবনা কম থাকে। অন্যদিকে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) ঢাকার তুলনায় এখন ঢাকার বাইরে মফস্বল এলাকায় বেশি নজর দেয়ার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে। এলাকায় এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের বিশেষ মেডিক্যাল টিম মাঠে নামানোর কথাও ভাবছে। বলা হচ্ছে যেসব এলাকায় ঘরে ঘরে উপসর্গ দেখা যায়, সেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে বা বিশেষ বুথ বসিয়ে অ্যান্টিজেন টেস্ট করতে হবে, রেজাল্ট পজিটিভ হলে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিটি এলাকায় বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টিকাদান নিশ্চিত করতে হবে। এসব কাজে স্থানীয় কমিউনিটিকে যুক্ত করতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে টেলিফোনের মাধ্যমে হলেও প্রতিদিন মনিটর করতে হবে। তা না করলে একদিকে যেমন সংক্রমণের দ্রæত বিস্তার ঘটবে, তেমনি মৃত্যুও বাড়তে থাকবে। চাপ আরো বাড়বে হাসপাতালের ওপর, যা সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না। 8,637,599 total views, 2,598 views today |
|
|
|